বাইনারি ট্রেডিং (Binary Trading) হলো এক ধরনের আর্থিক লেনদেন যেখানে আপনি একটি নির্দিষ্ট সম্পত্তির (যেমন – স্টক, কারেন্সি, কমোডিটি) মূল্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাড়বে না কমবে তা অনুমান করেন। এর ফলাফল হয় ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ (অর্থাৎ, বাইনারি), তাই এর নাম বাইনারি অপশন।
বাইনারি ট্রেডিং কিভাবে কাজ করে:
* সম্পত্তি নির্বাচন: প্রথমে আপনি একটি সম্পত্তি বেছে নেন, যেমন – ইউরো/ইউএসডি (EUR/USD) কারেন্সি পেয়ার, গোল্ড (Gold) বা কোনো কোম্পানির শেয়ার।
* দিক অনুমান: আপনি অনুমান করেন যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই সম্পত্তির মূল্য বাড়বে (কল অপশন) নাকি কমবে (পুট অপশন)।
* মেয়াদপূর্তি সময়: একটি মেয়াদপূর্তি সময় (expiry time) নির্ধারণ করা হয়, যা কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা এমনকি এক দিনেরও বেশি হতে পারে।
* বিনিয়োগ: আপনি আপনার বিনিয়োগের পরিমাণ নির্দিষ্ট করেন।
* ফলাফল: মেয়াদপূর্তি সময় শেষ হওয়ার পর, যদি আপনার অনুমান সঠিক হয়, তাহলে আপনি আপনার বিনিয়োগের উপর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ লাভ (যেমন, ৮০% বা ৯০%) পাবেন। যদি আপনার অনুমান ভুল হয়, তাহলে আপনি আপনার বিনিয়োগের সম্পূর্ণ অর্থ হারাবেন।
মূলত, এটি একটি ‘হয় সব পাবেন, নয়তো কিছুই না’ (all-or-nothing) ধরনের ট্রেডিং।
বাইনারি ট্রেডিং এর ইতিহাস:
বাইনারি অপশন ট্রেডিং এর ইতিহাস 1974 সালে শিকাগো বোর্ড অপশন এক্সচেঞ্জ (CBOE) চালু হওয়ার পর থেকে শুরু হয়। তবে, সাধারণ মানুষের জন্য এটি সরাসরি ট্রেড করার সুযোগ ছিল না।
2008 সালে, আমেরিকান স্টক এক্সচেঞ্জ (AMEX) এবং শিকাগো বোর্ড অপশন এক্সচেঞ্জ (CBOE) -এ বাইনারি অপশনকে প্রকাশ্যে ট্রেডযোগ্য সম্পদ হিসেবে উপলব্ধ করা হয়। এর কয়েক মাস পরে, 24Option, Qutex, pocketOption,এবং AnyOption-এর মতো কিছু ব্রোকার বাইনারি অপশন প্ল্যাটফর্ম চালু করে, যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাইনারি ট্রেডিংকে জনপ্রিয় করে তোলে।
তবে, এই ব্রোকার-ভিত্তিক মডেলের একটি সমস্যা ছিল: স্বার্থের সংঘাত। কারণ, এখানে ট্রেডাররা ব্রোকারের বিপরীতে বাজি ধরতেন, অর্থাৎ ট্রেডার জিতলে ব্রোকার হারতো এবং উল্টোটা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য, 2009 সালে প্রথম বাইনারি অপশন এক্সচেঞ্জ “নর্দার্ন আমেরিকান ডেরিভেটিভস এক্সচেঞ্জ (NADEX)” চালু হয়। NADEX-এর মতো এক্সচেঞ্জগুলো ট্রেডারদের একে অপরের সাথে ট্রেড করার সুযোগ দেয়, যা স্বার্থের সংঘাতের সমস্যা দূর করে।
2012 সালে, সাইপ্রাস সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (CySEC) প্রথম বাইনারি অপশনকে ট্রেডযোগ্য সম্পদ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করে। এরপর থেকে বাইনারি অপশন ট্রেডিং আরও প্রসারিত হয়। তবে, এর পর থেকে বিভিন্ন স্ক্যাম এবং প্রতারণার ঘটনাও বাড়তে থাকে, যার ফলে অনেক দেশে বাইনারি অপশন ট্রেডিংকে জুয়া হিসেবে দেখা হয় এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এর উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। উদাহরণস্বরূপ, ইউরোপীয় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড মার্কেটস অথরিটি (ESMA) খুচরা বাইনারি অপশন ট্রেডিং নিষিদ্ধ করেছে এবং অস্ট্রেলিয়ান সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস কমিশন (ASIC) 2021 সালে খুচরা বিনিয়োগকারীদের কাছে বাইনারি অপশন বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে।
বর্তমানে, অনেক দেশে বাইনারি অপশন ট্রেডিং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বা এমনকি অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এর সাথে উচ্চ প্রতারণার ঝুঁকি এবং বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা জড়িত।
বাইনারি ট্রেডিং কি এবং এটা শুরু হওয়ার ইতিহাস
- Home
- বাইনারি ট্রেডিং কি এবং এটা শুরু হওয়ার ইতিহাস